স্ত্রীর পরকীয়া এবং তার পরিকল্পনাতেই খুন হয়েছেন রংপুরের অতিরিক্ত জজ
আদালতের পিপি এবং চাঞ্চল্যকর জাপানি নাগরিক হোসি কোনিও ও মাজারের খাদেম
রহমত হত্যা মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী রথিশ চন্দ্র ভৌমিক (বাবু সোনা)।
পাঁচ দিন নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নিজ বাড়ির নিকটস্থ
তাজহাট মোল্লা পাড়ার একটি নির্মাণাধীন বাসা থেকে অর্ধ গলিত অবস্থায় তার
লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্ত্রীর পরকীয়া এবং তার পরিকল্পনাতেই তিনি খুন
হয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত নিহত এ্যাডভোকেট রথিশ চন্দ্রের
স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দিপা (দীপা ভৌমিক), তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম জাফরী
এবং সহযোগি আরও ২ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৩০ মার্চ নিখোঁজের পর
স্ত্রী দীপা জানিয়েছিলেন, গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় বাসা থেকে বের হন
নিহত আইনজীবী রথিশ চন্দ্র ভৌমিক (বাবু সোনা)। এর পর আর বাসায় ফেরেননি। সকাল
১০টার পর থেকে তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ ছিল। কিন্তু পুলিশের ধারণা
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটা থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। কারণ তার মোবাইলের
কললিষ্ট অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত দশটা ২২ মিনিটে সর্বশেষ তিনি মোবাইল ফোনে
কথা বলেন। তখন তার অবস্থান ছিল স্টেশন এলাকায়। সেই থেকে তার ফোন বন্ধ ছিল।
কিন্তু রথিশের স্ত্রী পুলিশ-র্যাবকে জানিয়েছিলেন শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টার
দিকে একটি মোটর সাইকেলে উঠে চলে যান তার স্বামী। আসলে রথিশ চন্দ্র নিখোঁজ
ছিলেন বৃহস্পতিবার রাত থেকেই। তাকে ওই রাতেই হত্যা করে একটি বাড়ির মাটিতে
পুঁতে রাখা হয়।
ক্লুবিহীন এই হত্যাকাÐ নিয়ে চরম বিপাকে পড়ে যায়
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৪ দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি-জামায়াত সম্পৃক্ততা,
জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, ব্যক্তিগত এবং হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট নিয়ে কাজ
শুরু করেন তারা। ৪ দিনেও উদ্ধার না হওয়ায় নানা কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে উঠে
রংপুর।
দফায় দফায় পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সদস্যরা এ্যাডভোকেট রথিশের বাড়িতে যান। সেখানে রথিশের স্ত্রীর সাথে কথা
বললে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হয়। জানা গেছে, পুলিশ কয়েক দফায় রথিশের স্ত্রী
সন্তানের সঙ্গে কথার বলার সময় তারা অনেকটাই স্বাভাবিক ছিলেন। নিখোঁজের
বিষয়টিতে তারা খুব একটা আমলে নেননি। স্ত্রীর দাবি অনুযায়ী শুক্রবার সকাল
থেকে তিনি নিখোঁজ। অথচ মোবাইল কল লিস্টে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার রাত দশটায়
সর্বশেষ কথা বলেন তিনি। এরপর তার ফোনে আর কল যায়নি বা আসেনি। ওই কল লিস্ট
অনুযায়ী দেখা যায় কামরুল ও দীপা ভৌমিক প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৩ বার কথা
বলতেন। পরে এ্যাডভোকেট রথিশ চন্দ্রের স্ত্রী দীপা ভৌমিকের সহকর্মী ও
তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল ইসলামকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ
করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়।
দীর্ঘ
জিজ্ঞাসাবাদে কামরুল ইসলাম পরকীয়া এবং খুনের বিষয়টি স্বীকার করলে র্যাব
দীপা ভৌমিককে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ি থেকে র্যাব
কার্যালয়ে নিয়ে আসে। তার তথ্যের ভিত্তিতেই র্যাব-পুলিশ যৌথভাবে দীপা ভৌমিক
প্রেমিক কামরুল ইসলামের ভাই খাদেমুল ইসলাম জাফরির বাড়ি থেকে অর্ধ গলিত লাশ
উদ্ধার করা হয়। নিহতের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিকসহ স্বজনরা এ্যাডঃ রথিশের লাশ
শনাক্ত করেন।
যেভাবে হত্যা করা হয়
মুলতঃ স্ত্রীর পরকীয়া প্রেম এবং
পারিবারিক কলহের কারণেই খুন হয়েছেন এডভোকেট রথিশ চন্দ্র ভৌমিক (বাবু সোনা)।
তাকে দুধের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
পরে তার লাশ একটি আলমারিতে ভরে আলমারি পরিবর্তনের নাম করে নিয়ে যাওয়া হয়
মোল্লাপাড়ার সেই বাড়িতে। সেখানে পূর্বেই করে রাখা গর্তে তার লাশ পুতে রাখা
হয়।
গতকাল বুধবার রংপুর র্যাব-১৩ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি
বলেন, দীর্ঘ দুই মাস ধরে হত্যা পরিকল্পনা করেন এ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র
ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দিপা ও তার প্রেমিক কামরুল মাস্টার। তারা
উভয়েই তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
No comments:
Post a Comment